জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার ২৬ এপ্রিল, ১৯৬৫ সালে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি অনানুষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মিশন: বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনীবস্তুর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করা এবং নবীন ও অপেশাদার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনীমূলক কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান।
ভিশন: একটি বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠন।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে ৮টি গ্যালারি রয়েছে। গ্যালারিগুলো হলোঃ-
(১) ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারি
(২) শিল্প প্রযুক্তি গ্যালারি
(৩) জীব বিজ্ঞান গ্যালারি
(৪) তথ্য প্রযুক্তি গ্যালারি
(৫) মজার বিজ্ঞান গ্যালারি
(৬) শিশু বিজ্ঞান গ্যালারি
(৭) মহাকাশ বিজ্ঞান গ্যালারি
(৮)4thIR কর্ণার (VR ও Innovation এবং বঙ্গবন্ধু কর্ণার)
(৯) Aviation গ্যালারি ও বহিরাঙ্গন বিজ্ঞান প্রদর্শনী
(১০) Biodiversity গ্যালারি ও শিশু কর্ণার
তাছাড়া রয়েছে আকাশ পর্যবেক্ষণ মানমন্দির এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক গ্রন্থাগার ।
জাদুঘর জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতামালা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। বিজ্ঞান জাদুঘর তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনীমূলক কাজে সহায়তা করে থাকে ।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের বর্তমান কার্যক্রমঃ
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কার্যক্রম মূলতঃ ৪টি ভাগে ভাগ করা যায় ।
ক) গ্যালারি প্রদর্শনী
খ) শিক্ষা কার্যক্রম
গ) প্রকাশনা
(ঘ) ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান জাদুঘর ও অবজারভেটরি এবং চতুর্মাত্রিক (4D) মুভি প্রদর্শনী
ক) গ্যালারি প্রদর্শন :- জাদুঘরের গ্যালারিগুলো হলো- ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারি, মজার বিজ্ঞান গ্যালারি, জীব বিজ্ঞান গ্যালারি, তথ্য-প্রযুক্তি গ্যালারি, শিল্প প্রযুক্তি গ্যালারি, শিশু বিজ্ঞান গ্যালারি, মহাকাশ গ্যালারি এবং VR ও ইনোভেশন গ্যালারি। তাছাড়া বহিরাঙ্গন প্রদর্শনীবস্তুর মধ্যে রয়েছে টাইটানিক জাহাজ, প্রশান্ত সরোবর, বায়ুকল, ডাইনোসরের ভাস্কর্য, সূর্য ঘড়ি, বিমান গ্যালারি ।
প্রবেশমূল্যঃ ২০/- (বিশ) টাকা।
4D মুভি প্রদর্শনী মূল্য: ৪০/- (চল্লিশ) টাকা।
VR প্রদর্শনী: ২০/- (বিশ) টাকা।
টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ:
প্রতি শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যায় আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে ১০ টাকা টিকেটের বিনিময় শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশে প্রাপ্তিযোগ্য চাঁদ, শুক্রগ্রহ, মঙ্গলগ্রহ, শনিগ্রহ, বৃহস্পতিগ্রহ, এ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, রিংনেবুলা, সেভেন সিস্টার, জোড়াতারা ও তারার ঝাঁক পর্যবেক্ষণ করা যায়।
খ) শিক্ষা কার্যক্রম
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর একটি অনানুষ্ঠানিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর বিভিন্ন সময়ে জনপ্রিয় বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যবৃন্দ, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিপুল সংখ্যক বিজ্ঞানামোদী শ্রোতার সমাবেশ ঘটে। দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী , প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞান শিক্ষকবৃন্দ অনুষ্ঠানসমূহে বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে নির্ধারিত বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর মিউজুবাসের মাধ্যমে সারা দেশে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করার লক্ষ্যে কুইজ, অলিম্পিয়াড ও বিজ্ঞান মেলার অয়োজন করা হয়।
গ) প্রকাশনা
নবীন বিজ্ঞানী পত্রিকা, ত্রৈমাসিক ‘দর্পণ’, জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতামালার গ্রন্থ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাৎসরিক কার্যক্রমের উপর পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ করা হয়।
ঘ) ভ্রাম্যমান বিজ্ঞান জাদুঘর ও 4D (চর্তুমাত্রিক) মুভি প্রদর্শনী:
ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান জাদুঘর প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে ৫টি মিউজু বাস, যার প্রতিটি বাসে স্থাপিত ২৪টি প্রদর্শনী বস্তুর মাধ্যমে বিজ্ঞান জাদুঘরের পরিসেবা প্রদান করা হয়। বিনোদনের জন্য রয়েছে ৩টি 4D (চতুর্মাত্রিক) মুভি বাস। যেখানে একসাথে ১৫ জন দর্শক 4D মুভি উপভোগ করতে পারে। মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য আছে ২টি অবজারভেটরি বাস। এ অবজারভেটরি বাসে একটি টেলিস্কোপও আছে, যা সন্ধ্যার পর রাতের আকাশে আকাশপ্রেমীদের জন্য চাঁদ, গ্রহ, তারা ও গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
লাইব্রেরী / গ্রন্থাগার:
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স এর ২য় তলায় মাঝারী আকারের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক আধুনিক গ্রন্থাগার রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রায় সাত হাজার দেশি-বিদেশী বইয়ের সংগ্রহশালা এই গ্রন্থাগারটি। এসবের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কিছু এনসাইক্লোপিডিয়া, বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, লাইফ সাইন্স এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ইত্যাদি বিষয়ের উপর দেশী ও বিদেশী বইসমূহ। এছাড়া চলতি ঘটনাপ্রবাহের ওপর জার্নাল ও পিরিয়ডিক্যালস এবং কিছু গবেষনামূলক গ্রন্থও রয়েছে। গ্রন্থাগারটি রবিবার থেকে বৃহঃপতিবার সকাল ৯:০০টা থেকে বিকাল ৪:০০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাধারণত শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান অনুরাগী ও গবেষকবৃন্দ এই গ্রন্থাগারের পাঠক। গ্রন্থাগারটি সকলের জন্য উন্মুক্ত।
ওয়ার্কশপ:
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের নীচতলায় একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। সাধারণ কর্মকান্ডে এটি ব্যবহৃত হলেও এর বিশেষ উদ্দেশ্য হলো প্রদর্শনীবস্তু মেরামত ও সংরক্ষণ করা। ওয়ার্কশপটিতে সাধারণত মেশিনিং, ওয়েল্ডিং, প্যাটার্ন মেকিং ইত্যাদি কাজ করা হয়।
বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রেরম আওতায় দেশব্যাপি নিম্নোক্ত কার্যক্রম পালন করা হয়:-
ক) প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞান প্রদর্শনী
খ) বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন
গ) বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন
ঘ) সিম্পোজিইয়াম ও আলোচনা সভা
ঙ) বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব প্রদর্শনী
এছাড়াও বিজ্ঞান বিষয়ক নাটিকা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ
১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপিত হয়ে আসছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান মেলা দু‘টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়।
ক) আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা ও জেলা কেন্দ্রে এবং
খ) কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ঢাকায়
আঞ্চলিক পর্যায়ের অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞান মেলা:-
আঞ্চলিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানে জেলায় অবস্থিত সকল উপজেলা/থানার হাইস্কুল/মাদ্রাসা, সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী জুনিয়র গ্রুপে, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সিনিয়র গ্রুপে এবং বিজ্ঞান ক্লাবের কর্মীগণ ও উদ্ভাবনে আগ্রহী অপেশাদার ব্যক্তিবর্গ বিশেষ গ্রুপে প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে। উপজেলায় নির্বাচিতদেরকে নিয়ে জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞান মেলা :-
জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিটি কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী জুনিয়র, সিনিয়র ও বিশেষ গ্রুপের ১ম স্থান অধিকারী প্রতিযোগীর প্রজেক্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অলিম্পিয়াড :-
২০১৭ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক অলিম্পিয়াডের আয়োজন হয়ে আসছে। বিজ্ঞান বিষয়ক অলিম্পিয়াড ৩টি পর্যায়ে আয়োজিত হয়।
ক) আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা কেন্দ্রে
খ) জেলা পর্যায়ে প্রতিটি জেলা কেন্দ্রে
গ) কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ঢাকায়।
ক) আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অলিম্পিয়াড আয়োজন:
আঞ্চলিক পর্যায়ে আয়োজিত অলিম্পিয়াডে জেলার সকল উপজেলা/থানার উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক/সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে জুনিয়র ও সিনিয়র গ্রুপে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
খ) জেলা পর্যায়ে আয়োজন:
উপজেলা পর্যায়ে জুনিয়র ও সিনিয়র উভয় গ্রুপে বিজয়ী প্রথম ০৫ জন করে প্রতিটি উপজেলা থেকে প্রতিযোগীরা জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়।
গ) কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ঢাকায়:
প্রতিটি জেলাকেন্দ্র হতে জুনিয়র ও সিনিয়র উভয় গ্রুপে ১ম ও ২য় স্থান অধিকারী সর্বমোট ২৫৬ জন প্রতিযোগী কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কুইজ:-
২০১৭ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়ে আসছে। জাতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ৪টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়।
ক) আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা কেন্দ্রে:
আঞ্চলিক পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিটি জেলার সকল উপজেলা / থানার উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা অথবা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এককভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ী প্রথম তিন জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল উপজেলা পর্যায়ে গঠিত অন্যান্য দলের সাথে প্রতিযোগিতা করে।
খ) জেলা পর্যায়ে কুইজ আয়োজন:
উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা হতে বিজয়ী প্রথম পাঁচটি দল নিয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
গ) বিভাগীয় পর্যায়ে কুইজ আয়োজন:
প্রতিটি জেলা হতে বিজয়ী প্রথম পাঁচটি দল বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
ঘ) কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ঢাকায়:
বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিটি বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান তিনটি দল কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়।
ঙ)বিজ্ঞান ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতা:
(ক) প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উপজেলা বিজ্ঞান ক্লাব পরিচালনা করা
(খ) দেশব্যাপী রেজিষ্টার্ড বিজ্ঞান ক্লাবসমূহের পৃষ্ঠপোষকতা করা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা